Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

কম খরচে তুলা চাষের আধুনিক প্রযুক্তি

কম খরচে তুলা চাষের 
আধুনিক প্রযুক্তি
ড. মোঃ গাজী গোলাম মর্তুজা১ অসীম চন্দ্র শিকদার২
বর্তমান বিশ্বে তুলা একটি গুরুত্বপূর্ণ আঁশজাতীয় ফসল বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাত হচ্ছে বস্ত্র ও গার্মেন্ট খাত। তাই অর্থনৈতিক স্বার্থে তুলা উৎপাদন বৃদ্ধি একান্ত জরুরি। বাংলাদেশে মূলত সমভূমি জাতের এবং সীমিত আকারে পাহাড়ি জাতের তুলার চাষ হয়ে থাকে। তবে পাহাড়ি অঞ্চলের সমতল ভূমিতে ও পাহাড়ের ঢালেও সমভূমির জাতের তুলাচাষ হচ্ছে। সমভূমি জাতের তুলাচাষ নির্ভরই আমাদের বস্ত্র শিল্প। তুলা উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে নতুন নতুন চাষ এলাকা বৃদ্ধির প্রক্রিয়া এবং তুলা চাষে আধুনিক প্রযুক্তি ও কলাকৌশল প্রয়োগ চলছে।
তুলাচাষ এলাকা বৃদ্ধির উপায়
মাঠ ফসলের তুলনায় তুলা চাষে কম সেচের প্রয়োজন হয়। তাই তুলাচাষ সম্প্রসারণের একটি সম্ভাবনাময় এলাকা হলো রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের অন্তর্ভুক্ত উঁচু বরেন্দ্র অঞ্চল। এ অঞ্চলে ৫.৮২ লাখ হেক্টর আবাদযোগ্য জমি রয়েছে; যার মধ্যে ৮৪% এক ফসলি জমি। এ অঞ্চলে ফসলের নিবিড়তা মাত্র ১১৭%। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম হওয়া এবং সঠিক সময়ে বৃষ্টিপাত না হওয়াই বরেন্দ্র অঞ্চল খরাপ্রবণতার প্রধান কারণ। তুলা চাষ উপযোগী সময় খরিপ-২ (জুলাই-অক্টোবর) মাসে এ অঞ্চলে বৃষ্টিনির্ভর আমন ধানের চাষ হয়ে থাকে। তাই এ অঞ্চলে হালকা নিয়ন্ত্রিত সেচের মাধ্যমে তুলা চাষ সম্প্রসারণ চলছে। 
স্বাভাবিক বন্যামুক্ত চরগুলো তুলা চাষের আওতায় আনার কাজ চলছে। ঐ সব জমির উপরি ভাগে বালু থাকে বিধায় অন্যান্য ফসল চাষের পরিবর্তে গভীরমূলী তুলা চাষের ভালো সম্ভাবনা রয়েছে। তবে চর এলাকায় বন্যার ঝুঁকি রয়েছে বিধায় ব্যয়বহুল হাইব্রিড জাতের তুলা চাষের পরিবর্তে আধুনিক জাতের তুলাচাষ করতে হবে। আর বন্যা প্রবণ চরগুলোতে তুলা বপনের সময় কোন ব্যাসাল সার দেয়া যাবে না। প্রাথমিক বন্যায় যদি ফসল বিনষ্ট না হয়, তবে বন্যার ঝুঁকি চলে যাওয়ার পর পরই সার প্রয়োগ সহ দ্রুত অন্যান্য পরিচর্যা করতে হবে। চরগুলোর বালুর স্তরের নিচেই পলির স্তর রয়েছে, তুলার শিকড় পলির স্তরে পৌঁছে বাড়তি পুষ্টি সংগ্রহ করতে পারে। বর্তমানে টাঙ্গাইলের লাউহাটি, কেদারপুর, পাবনার হেমায়েতপুর, নাটোরের লালপুর এবং জামালপুরের পাথালিয়ার চরে সফলভাবে তুলা চাষ করা হচ্ছে।
বন্ধ চিনির মিলগুলোর আওতাধীন জমিও তুলা চাষের আওতায় আনা যেতে পারে। রংপুর অঞ্চলের এবং পার্বত্য অঞ্চলের তামাক চাষের জমিগুলো তুলা চাষের আওতায় আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন মিল-ইন্ডাস্ট্রির পরিত্যাক্ত জমি তুলা চাষের আওতায় আনা যেতে পারে। 
দক্ষিণাঞ্চলে তুলাচাষ সম্প্রসারণ কাজ শুরু করা হয়েছে। বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় ১০ লাখ হেক্টর লবণাক্ত জমি রয়েছে, যা ডিসেম্বর-মে পর্যন্ত পতিত থাকে। বাংলাদেশের বেশির ভাগ ফসল লবণাক্ততা সংবেদনশীল হওয়ার কারণে         কৃষি কাজে ঐ সব জমির ব্যবহার কম হয়। তবে অন্যান্য অঞ্চলের ন্যায় জলাবদ্ধতার কারণে খরিপ-২ মৌসুমে এ অঞ্চলে তুলা চাষের উপযোগিতা কম। তবে খরিপ-১ অর্থাৎ গ্রীষ্মকালীন সময়ে তুলার চাষ করা যেতে পারে। এ অঞ্চলের উপযোগী পলিব্যাগে চারা উৎপাদন করে গ্রীষ্মকালে তুলা চাষ করার পদ্ধতি এরই মধ্যে উদ্ভাবন করা হয়েছে। ভারতের সুন্দরবন অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে হাইডেনসিটি প্লান্টিং সিস্টেমের মাধ্যমে তুলা চাষের মতো আমাদের দেশেও করার চেষ্টা করা যেতে পারে।
ইতোমধ্যে খরা, লবণাক্ত, চর ও পাহাড়ি এলাকার উপত্যকার সমতল ভূমিতে আপল্যান্ড তুলাচাষ সম্প্রসারণের জন্য ভিত্তিবীজ ও মান সম্পন্ন বীজ উৎপাদন করে তা চাষিপর্যায়ে স্বল্পমূল্যে/বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে। সাফল্য পেলে বাংলাদেশে তুলা চাষে বিপ্লব ঘটে যাবে।
জমি নির্বাচন ও প্রস্তুতকরণ
তুলা চাষের উৎকৃষ্ট মাটি হলো দো-আঁশ এবং বেলে দো-আঁশ, তবে পর্যাপ্ত জৈব সার যুক্ত যে কোন মাটিতেই তুলা চাষ করা সম্ভব। কর্দমাক্ত এঁটেল মাটিতে তুলা চাষ না করাই ভালো। উঁচু, সমতল, বর্ষার পানি উঠে না, বৃষ্টির পানি দাঁড়ায় না, প্রয়োজনে হালকা সেচের সুবিধা আছে, মাটির পিএইচ মান ৬.০ থেকে ৭.৫ ছায়া মুক্ত এমন জমিই তুলা চাষের জন্য নির্বাচন করতে হবে। তবে তুলাবীজ বপনের এক মাস পূর্বে অধিক অম্ল মাটিতে চুন প্রয়োগ করে তুলা চাষের উপযোগী করে নেয়া যেতে পারে। তুলা চাষের পূর্বে সময় থাকলে জমিতে সবুজসার যোগ করার জন্য দ্রুত পচনশীল শিমজাতীয় উদ্ভিদ যেমন- ধইঞ্চা, শন, মটরশুঁটি, বরবটি চাষ করে ফুল ফোটার সাথে সাথে চাষ দিয়ে সবুজ অবস্থায় মাটির সাথে মিশিয়ে দিলে তা দ্রুত পচে মাটিতে জৈব পদার্থ যোগ করবে। এ সকল উদ্ভিদ মাটিতে কেবল জৈব পদার্থইযোগ করে না, পর্যাপ্ত নাইট্রোজেনও সরবরাহ করে। সবুজ উদ্ভিদ মাটিতে মিশিয়ে দেয়ার ১৫-২০ দিন পর তুলাবীজ বপন করতে হবে।
তুলার জাত ও বীজ হার 
জমির ধরন অনুসারে চাষিদের সঠিক তুলার জাত নির্বাচন করতে হবে। এ ব্যাপারে তুলা উন্নয়ন বোর্ডের মাঠ কর্মকর্তাদের সাহায্য নেয়া যেতে পারে। হেক্টরপ্রতি তুলা উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য তুলা উন্নয়ন বোর্ড একটি হাইব্রিড, ১টি মিউটেন্ট এবং ২৩টি আধুনিক জাত উদ্ভাবন ও চাষিদের নিকট হস্তান্তর করেছে; এ ছাড়া বেসরকারি বীজ কোম্পানি কর্তৃক আমদানিকৃত হাইব্রিড রূপালী-১, ডিএম-৪, হোয়াইট গোল্ড-১,২ জাতের তুলার চাষ করারও সুযোগ রয়েছে। বর্তমানে চর্বনকারী পোকা/বোলওয়ার্ম প্রতিরোধী বিটি কটনের দু’টি হাইব্রিড জাত চাষাবাদ শুরু হয়েছে।
ফাজ যুক্ত বীজ হলে বিঘা (৩৩ শতাংশ) প্রতি ১.৫-২.০ কেজি, ডিলিন্টেড বীজ হলে বিঘা প্রতি ০.৬০০-০.৭০০ কেজি বীজের প্রয়োজন হবে। হাইব্রিড ডিলিন্টেড বীজের ক্ষেত্রে বিঘা প্রতি ৬০০ গ্রাম বীজের প্রয়োজন হবে। তবে বন্যামুক্ত উর্বর জমিতে হাইব্রিড জাতের বীজ বপন করাই উত্তম। কোনভাবেই হাইব্রিড তুলা চাষে অবহেলা করা যাবে না।
জমি তৈরি ও বীজ বপন
তুলা চাষের উপযুক্ত সময় হলো আষাঢ় থেকে শ্রাবণ মাস পর্যন্ত। তবে ঢাকা অঞ্চলে ভাদ্র মাসের ১৫ পর্যন্ত তুলা চাষ করা যায়। তুলা বীজ বপনের সময় যেহেতু ঘন ঘন বৃষ্টি হয়ে থাকে তাই ২/১টি চাষ ও মই দিয়েই তুলা বীজ বপন করতে হবে। তবে তুলা গভীরমূলী ফসল বিধায় কমপক্ষে একটি চাষ গভীরভাবে দেয়া দরকার। সময়মতো তুলাবীজ বপন করাই মুখ্য, পরে পরিচর্যার মাধ্যমে চাষের ঘাটতি পূরণ করতে হবে। 
বীজ বপন করতে হয় ডিবলিং পদ্ধতিতে। তুলাবীজ উত্তর দক্ষিণে সারি করে বপন করতে হয়। সারি থেকে সারির দূরত্ব ৯০ সেমি. এবং বীজ থেকে বীজের দূরত্ব ৩০-৩৫ সেমি. রাখতে হবে। জমির উর্বরতা এবং জাতের উপর ভিত্তি করে এর সামান্য কম বেশি করা যেতে পারে। প্রতি মাদায় ফাজি বীজ হলে ২/৩টি, হাইব্রিড ডিলিন্টেড বীজ হলে ২টি বীজ ১ থেকে ১.৫ ইঞ্চি মাটির গভীরে বপন করতে হবে। কোনভাবেই ১.৫ ইঞ্চির বেশি গভীরে বীজ বপন করা যাবে না। ফাজি বীজ বপনের পূর্বে পানিতে ভিজিয়ে পরে ছাই বা মাটি দ্বারা ঘষে প্রস্তুত করে নিলে ভালো হয়। এতে বীজ বপনে যেমন সুবিধা হবে তেমনি দ্রুত বীজ গাজাতেও সাহায্য করবে। বপনের পূর্বে ফাজি বীজ ছত্রাকনাশক (প্রতি কেজি তুলা বীজের সাথে ৩ গ্রাম ভিটাভেক্স/ব্যাডিস্টিন/গাউচু/টিল্ট) ভালোভাবে বীজের সাথে মিশিয়ে শোধন করে ১ ঘণ্টা ছায়ায় বীজ শুকিয়ে বপন করলে বীজবাহিত রোগ থেকে তুলা ফসল রক্ষা পাবে। তুলা বপনের পরপরই জমির পানি নিকাশের জন্য নালা কেটে রাখতে হবে। কারণ তুলা ফসল দাঁড়ানো পানি সহ্য করতে পারে না। তুলাবীজ বপনের সময় তুলা জমির লাইনের ফাঁকে অথবা পলিব্যাগে কিছু তুলা বীজ বপন করে রাখলে প্রয়োজনে সেই চারা দিয়ে গ্যাপ পূরণ করা যাবে। ভালো ফলন পেতে হলে বিঘাপ্রতি ৪০০০-৪৫০০টি তুলাগাছ নিশ্চিত করতে হবে। অনেক সময় প্রাকৃতিক দূর্যোগের কারণে সময় মতো তুলা বীজ বপন করতে না পারলে অথবা বন্যাপ্রবণ এলাকার জমির জন্য পলিব্যাগে সময়মতো বীজ বপন করে রাখলে পরে জোঁ-মতো সেই চারা জমিতে রোপন করা যায়। এতে যদিও খরচ কিছুটা বেশি হয় কিন্তু তুলার ফলনের কোন ব্যাঘাত হয় না। তুলা যেহেতু একটি লাভজনক ফসল, তাই প্রয়োজনে বাড়তি খরচ করা যেতেই পারে।
সাথী ফসল চাষ 
জমি উর্বর হলে তুলার লাইনের ফাঁকে ফাঁকে সল্পমেয়াদি সাথী ফসল যেমন-লালশাক, কলমিশাক, মুলাশাক, মুগকালাই, চীনাবাদাম, পাটবীজ ফসল ইত্যাদি চাষ করে বাড়তি আয় করা যায়। সাথী ফসল যেন মূল ফসলের সাথে সার, আলো এবং বাতাস নিয়ে প্রতিযোগিতা না করে সে দিকে নজর রাখতে হবে। অর্থাৎ তুলা ফসলের নিরাপদ দূর দিয়ে সাথী ফসল চাষ করতে হবে। তুলার লাইন থেকে ১৫ সেমি. করে বাদ দিয়ে মাঝের ৬০ সেমি. এর মধ্যে সাথী ফসল চাষ করা যেতে পারে। এ ছাড়া গম, ভুট্টা রিলে ফসল হিসেবেও চাষ করা যায়। 
সার ব্যবস্থাপনা
প্রতি বিঘায় সার প্রয়োগের পরিমাণ সারণি দ্রষ্টব্য। সারের মাত্রা জমির উর্বরতা এবং জাতের উপর ভিত্তি করে কম/বেশি করতে হবে পোলট্রি লিটার (হাঁসমুরগির বিষ্ঠা)। এ ছাড়া পোলট্রি ম্যানিউর ব্যবহার করলে সব ধরনের রাসায়নিক সার কম প্রয়োজন হয়। রাসায়নিক সার একাধিকবার প্রয়োগ করতে হয়। সব ধরনের জৈবসারই জমির শেষ চাষের পূর্বে জমিতে প্রয়োগ করতে হবে। ব্যাসাল সার বীজ বপনের সময় তুলার লাইন থেকে ৫-৬ সেমি. দূরে নালা কেটে পার্শ্ব প্রয়োগ করতে হবে। আন্তঃপ্রয়োগ সারও পার্শ্ব প্রয়োগ করতে হবে। হাইব্রিড জাতের তুলায় সব ধরনের সার ২০ শতাংশ বেশি প্রয়োগের প্রয়োজন হয়। অম্ল যুক্ত মাটিতে চুন তুলা বপনের এক মাস পূর্বে প্রয়োগ করতে হবে। তুলা বপনের পূর্বে সবুজ সার চাষ করলে তুলা বপনের কমপক্ষে ১৫ দিন পূর্বে সবুজ অবস্থায় মাটির সথে মিশিয়ে দিতে হবে।

লেখক : ১মৃত্তিকা উর্বরতা ও পানি ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ, তুলা উন্নয়ন বোর্ড, খামারবাড়ি, ঢাকা। ২কটন ইউনিট অফিসার (অব:), তুলা উন্নয়ন বোর্ড, মোবাইল : ০১৯২৩-৪১২২৫৬; ১০৪/১ (বি-২), শের-এ-বাংলা রোড, রায়ের বাজার, জাফরাবাদ, মোহাম্মদপুর-১২০৭।  ইমেইল :asim,cdb@gmail.com


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon